কক্সবংলা ডটকম(১২ মে) :: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফলাফলের সব সূচকে এবারও মেয়েরা এগিয়ে। এর আগের চার বছরও জিপিএ-৫ এবং পাশের দিক থেকে মেয়েরাই এগিয়ে ছিল। পরপর পাঁচ বছর বেশ চমক দেখাল মেয়েরা। এমন ফলে খোদ প্রধানমন্ত্রীও বিস্মিত হন। কেন বারবার মেয়েরা এগিয়ে এবং ছেলেরা পিছিয়ে যাচ্ছে, এর কারণ বিশ্লেষণ দরকার মনে করেন তিনি।
রোববার সকালে গণভবনে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এ বছর সাধারণ, কারিগরি, মাদ্রাসাসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। পাশের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।
উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্রী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ এবং ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন। প্রাপ্ত হিসাবে ছাত্রদের চেয়ে ৫৯ হাজার ৪৭ জন ছাত্রী বেশি পাশ করেছে, যা পাশের হারের দিক থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। করোনার পর এ বছরই শিক্ষার্থীরা পূর্ণ ক্লাস পেয়েছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশিত হলো।
এবার পাশের হারের দিক থেকে দেশসেরা হয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। সর্বোচ্চ পাশের হার ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অপরদিকে সর্বনিম্ন পাশের হার সিলেট বোর্ডে ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে শতভাগ পাশ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৮টি। অন্যদিকে ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাশ করেনি।
ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন ছাত্রী এবং ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন ছাত্র। ছাত্রদের চেয়ে ১৫ হাজার ৪২৩ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছাত্রীদের পাশের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার পাশের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বিভাগভিত্তিক ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেয়েদের পাশের হার ৯৪ দশমিক ০১ শতাংশ আর ছেলেদের হার ৯৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে মেয়েদের পাশের হার ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ আর ছেলেদের ৭৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
মানবিক বিভাগ থেকে মেয়েদের পাশের হার ৮৫ দশমিক ৮৪ আর ছাত্রদের ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ। সব বিভাগে মেয়েরা পাশের হারে এগিয়ে রয়েছে।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার জিপিএ-৫-এর দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডের পরীক্ষার্থী ছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ৯৬১ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৯ জন। এর মধ্যে ছেলে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৮ এবং মেয়ে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬১ জন। পাশের হার ৮৩ দশমিক ৯২। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ১৯০ শিক্ষার্থী।
পরের অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৯ জন। উত্তীর্ণ ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ৮৯ হাজার ১৩১ ও মেয়ে ৮৮ হাজার ৮২৭ জন। পাশের হার ৮৯ দশমিক ২৬। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ৭৪ জন শিক্ষার্থী।
পাশের হারে প্রথম হলেও জিপিএ-৫-এর দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডের পরীক্ষার্থী ছিলে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৬ জন। উত্তীর্ণ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন। এর মধ্যে ছেলে ৭১ হাজার ৭৯১ ও মেয়ে ৭৬ হাজার ৭৮৬ জন। পাশের হার ৯২ দশমিক ৩৩ শতাশং। এই বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী।
অপরদিকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৮৪ জন। উত্তীর্ণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৫ জন। এর মধ্যে ছেলে ৭৬ হাজার ১২৭ এবং মেয়ে ৭৯ হাজার ৩০৮ জন। পাশের হার ৭৮ দশমিক ৪৩। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১০৫ শিক্ষার্থী।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ১৯ হাজার ২৩৮ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ৫০ হাজার ৬৯৪ এবং মেয়ে ৫০ হাজার ৬৬৪ জন। পাশের হার ৮৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ১৭৬ জন।
কুমিল্লা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ ১ লাখ ৪২ হাজার ৮১ জন। ছেলে ৫৮ হাজার ৭৮২ এবং মেয়ে ৮৩ হাজার ২৯৯ জন। পাশের হার ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৪ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭ জন। এতে ছেলে ৫২ হাজার ৩২২ এবং মেয়ে ৬৭ হাজার ৭৬৫ জন। পাশের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৮২৩ শিক্ষার্থী।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৭ হাজার ৭৩৪ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ ৭৮ হাজার ১৯৭ জন। ছেলে ৩৫ হাজার ২৮২ এবং মেয়ে ৪২ হাজার ৯১৫ জন। পাশের হার ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ১৪৫ শিক্ষার্থী। সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৯ হাজার ৭৩ জন। উত্তীর্ণ ৮০ হাজার ৬ জন। এর মধ্যে ছেলে ৩৩ হাজার ৪০৬ এবং মেয়ে ৪৬ হাজার ৬০০ জন। পাশের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৭১ জন।
অপরদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৫ শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৪ জন। এর মধ্যে ছেলে ১ লাখ ৯ হাজার ৭১৪ এবং মেয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০ জন। পাশের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬ জন। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ২২ হাজার ৫৩৮ জন। উত্তীর্ণ ৯৯ হাজার ৭২১ জন। এর মধ্যে ছেলে ৭২ হাজার ৯৮৬ এবং মেয়ে ২৬ হাজার ৭৩৫ জন। পাশের হার ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৮ শিক্ষার্থী।
এদিকে এ বছরের ফলাফলসহ বিগত চার বছরের ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং পাশের হারে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে। ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা প্রতিবছর গড়ে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ পাশের হারে এগিয়ে রয়েছে। জিপিএ-৫-এর দিক থেকে গড়ে প্রতিবছর ১৬ হাজার ৯১৪ জন ছাত্রী বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশের হারে ছাত্রীরা ছাত্রদের চেয়ে ২.৪৭ শতাংশ এগিয়ে ছিল। ২০২১ সালে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, ২০২২ সালে দশমিক ৫৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ০১ শতাংশ এবং এবারের ফলাফলে ছাত্রদের চেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ ছাত্রীরা পাশের হারে এগিয়ে রয়েছে। পাঁচ বছরে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ গড়ে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। ২০২০ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ছাত্রদের চেয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে ছিল ৪ হাজার ৩৯০ জন। ২০২১ সালে ২৩ হাজার ৮১৬ জন, ২০২২ সালে ২৭ হাজার ২৯০ জন আর ২০২৩ সালে এগিয়ে ছিল ১৩ হাজার ৬৫০ জন। এবারও ১৫ হাজার ৪২৩ জন মেয়ে জিপিএ-৫-এ এগিয়ে রয়েছে। পাঁচ বছরে গড়ে জিপিএ-৫-এ এগিয়ে রয়েছে ১৬ হাজার ৯১৪ জন ছাত্রী।
ছাত্রীরা কীভাবে ভালো ফল করছে-এমন প্রশ্নে এবার ভিকারুননিছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সামিয়া জামান জারা বলে, বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘোরাফেরা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছিলাম না। অনেক কিছু বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম।
১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১২ মার্চ। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৩ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন। মদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন। সারা দেশে ২৯ হাজার ৮৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৭৯৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এসএসসির ফল চ্যালেঞ্জ আজ থেকে :
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে কারও কাঙ্ক্ষিত ফল না এলে সে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বা খাতা চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। এ কার্যক্রম শুরু হবে আজ থেকে, চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
Posted ২:২৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ মে ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta